ফ্রেঞ্চাইজিদের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে বনিবনা না হওয়ায় চলতি বছর ফ্রেঞ্চাইজি ছাড়াই মাঠে গড়াতে যাচ্ছে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। দলগুলো পরিচালনা করবে বিসিবি নিজেরাই। চলতি বছর কোনো ফ্রেঞ্চাইজির সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তিতেও যায়নি বোর্ড। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় ঘরোয়া আসরের নামেও আনা হচ্ছে বদল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিপিএলের নাম রাখা হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’। আগের আসরের সাতটি দলকে নিয়ে নির্ধারিত সূচিতে বিপিএলের সপ্তম আসর শুরু হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর। তার আগে ৩ ডিসেম্বর হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

ফ্র্যাঞ্চাইজি না থাকায় পুরো আসর মাঠে গড়াবে বিসিবির অর্থায়নে। অর্থাৎ প্রতিটি দলের এবং ক্রিকেটারদের খরচ বহন করবে বোর্ড। চলতি বছর সবগুলো ফ্রেঞ্চাইজির সঙ্গেই চুক্তি শেষ হয়ে যায় বিসিবির। নতুন চুক্তির আগে দুই পক্ষ নানান বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি। ‘কয়েকটা ফ্রেঞ্চাইজি আমাদের বলেছে, এই বছর আরেকটা বিপিএল না হোক, সেটাই ওরা চায়। বলছে যে, এক বছরে দুটো আসরে চাপ বেশি হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এবারের বিপিএল বিসিবি নিজেরাই চালাবে। আমরা কোনো ফ্রেঞ্চাইজি ভিত্তিতে যাচ্ছি না।’
২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী হওয়ায় এবার বিপিএলকে বিশেষ আসরের তকমা দিয়ে এই আদলে সাজানো হচ্ছে বলেও জানান বোর্ড প্রধান, ‘এটার পেছনে আরেকটা কারণ আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। কাজেই বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে এবারেরটা আমরা বঙ্গবন্ধুর নামে চালাব, এবার কোনো ফ্রেঞ্চাইজিকেই দিচ্ছি না।’

ফ্রেঞ্জাইজি না থাকলেও আগেরবারের সাতটি দলই থাকছে এবারের বিপিএলে। তবে সব ম্যানেজমেন্ট থাকছে বিসিবির কাছেই, ‘প্রত্যেক দল- যা দল যা ছিল সব ঠিক থাকবে। শুধু ম্যানেজমেন্ট আমাদের থাকবে। খেলোয়াড়দের থাকা খাওয়া, পরিবহনখরচ সব কিছু আমরা বহন করব। এতে করে অন্যরা খুশি হবে। যারা (ফ্রেঞ্চাইজি) এবার খেলতে চাচ্ছিলেন না, তারা খুশি হবেন। যারা আর্থিক ক্ষতির কথা বলছেন, তারা তো আরও বেশি খুশি হবেন। তাদের পুরো টাকাটাই বেঁচে যাবে।’ ‘আপনারা বিগ ব্যাশের কথা চিন্তা করতে পারেন। একই ফরম্যাটে হবে। এবারেরটা বঙ্গবন্ধু বিপিএল। আর স্পন্সর আসলে তার নাম যাবে আগে। সব করবে বিসিবি। এখনও এটা প্রথমিক ধাপ। আমরা দলের স্পন্সরশিপ নিতে পারি। কেউ যদি দলের স্পন্সর নিতে চায়, আসতে চায় দলের সঙ্গে, স্পন্সর আসতে পারে।’ সাতটি দল একই থাকলেও তাদের নামে আসতে পারে বদল, ‘এটা (দলের নাম) স্পন্সরের উপর নির্ভর করবে। তবে আমরা চেষ্টা করব ঠিক (আগেরবারের মতো) রাখতে। কিছু না হলে ঢাকা, খুলনা এসব নাম তো থাকবে। আগের নাম রাখারই চেষ্টা হবে। কারণ এইটা (ফরম্যাট) তো পরের বছর নাও থাকতে পারে।’
ফ্রেঞ্চাইজিগুলোর দাবিদাওয়ার মধ্যে বড় এক দাবি ছিল বিপিএলের আয়ের অংশ। কিন্তু বিসিবি প্রধান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন এসব দাবি কোনোভাবেই মানতে পারবেন না তারা, ‘কোনোভাবেই ওদের দাবি-দাওয়া মানা সম্ভব না। রেভিনিউ শেয়ার (লাভের টাকা ভাগ) কোনোভাবেই সম্ভব না।’ ফ্রেঞ্চাইজিরা নিয়ম না মানার কারণে তৈরি হওয়া সংকট থেকে বেরুতে এবার এই সিদ্ধান্তে গিয়েছেন তারা। সাকিব আল হাসানকে ঢাকা ডায়নামাইটস থেকে রংপুর রাইডার্সে দলে নেওয়ার পরই তৈরি হয় জটিলতা। যা করতে নিয়ম মানা হয়নি বলে জানিয়ে আসছে বিসিবি। আগামীতে ফ্রেঞ্চাইজিরা বিসিবির নিয়মে রাজি থাকলে পরের বছর থেকে ফিরবে ফ্রেঞ্চাইজি লিগ, ‘সাকিব কেন, মুশফিক আছে, তামিম আছে, কোনোটাই তো গ্রহণযোগ্য না। খেলোয়াড় রিটেইন (ধরে রাখা) থাকা অবস্থায়, আরেকদল খেলোয়াড় নিয়ে নিতে পারে না। এইটা কোথাও নেই। এটা সবাই জানে। সাকিব তো জানে। সাকিবকে জিজ্ঞেস করেন না বলতে যে, আমি হায়দ্রাবাদে খেলব না এই বছর, চেন্নাইতে খেলব। সম্ভব না। অনেক কিছু হয়েছে, যেটা বদল করতে পারিনি। আর অনিয়ম হবে না।’

বিসিবি প্রধান বলেন, বিপিএলে আসতে হলে ব্যবসা করার মানসিকতা ছাড়তে হবে, ‘আমরা যেটা বলব, বিপিএলে যারা আসবে তারা খেলোয়াড়দের উন্নতির কথা ভেবে আসবে, লাভের কথা ভেবে আসবে না। এখানে লাভের কোনো সুযোগ নেই।’ ক্ষতি স্বীকার করে কেউ কেন ক্রিকেটে যুক্ত হবে? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যায় বিসিবি প্রধান জানান ক্ষতি হচ্ছে না কারও, ‘ক্ষতি যদি হয় তাহলে ৮০ লাখ টাকার খেলোয়াড় ৪ কোটি টাকা দিয়ে নিত না। এগুলো করছে বেআইনিভাবে। কত দাম দিয়ে নিচ্ছে আমি জানি না! ক্ষতি কিসের। নিশ্চয়ই অনেক লাভ করে। আরও লাভ করতে চায়। যেটা আইনে নেই, আমরা তার বাইরে যেতে পারব না। আমার কাছে আরও ২০টা খেলোয়াড় এসেছে, যারা অন্য ফ্রেঞ্চাইজিতে যেতে চায় নিজেরা যোগাযোগ করে। তবে এটা কি ফ্রেঞ্চাইজি লিগ থাকল? কাজেই এসব কারণে আমরা একটা নিয়মের মধ্যে আসতে চাইছি।’

Share.

Leave A Reply

Exit mobile version