উজিরপুর প্রতিনিধি:  বরিশালের উজিরপুরে আমের বাগান ও মাত্র ১৪৭৫ টাকা দিয়ে নার্সারীর ব্যবসা শুরু করে আজ স্বাবলম্বী মাহাবুব ইসলাম বাদল ওরফে নার্সারী বাদল (৩৮)। তাকে অনুসরণ করে আজ গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় নার্সারী ও ফলের বাগান। দূর দূরান্ত থেকে তার রসালো আমের বাগান ও নার্সারী দেখতে দর্শনার্থী ও ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছে। উপজেলার পূর্ব মুন্ডপাশা গ্রামের মৃত আঃ জব্বার সরদারের ৪ ছেলের মধ্যে সেজ ছেলে মাহাবুব ইসলাম বাদল ধামুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা কালীন কৃষি শিক্ষক বঙ্কিম স্যারের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই মাত্র ১৪৭৫ টাকা দিয়ে প্রথমে ১০ শতাংশ জমিতে বনজ বৃক্ষের চারা উৎপাদন শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও ধৈর্য্যরে মাধ্যমে ৫ একর জমিতে একে একে ৫টি প্লটে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের চারা উৎপাদন শুরু করেন। তখন থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ যাবৎ ২০ লক্ষাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিক্রি করে পুরো এলাকা যেন সবুজ বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। তখন থেকেই তাকে সবাই নার্সারী বাদল উপাধীতে ভ‚ষিত করে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম সর্দার নার্সারী। এগুলো সবই শিকারপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এ ছাড়া পূর্ব ধামুরায় তার আপন ভাগনি জামাই আমেরিকা প্রবাসী আমিনুল ইসলাম খান শওকতের কমলিনী নিবাসের নিকটেই ২০১৭ সালে এক একর জমিতে ১৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির আম ও ১০০টি মালটাসহ বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। ইতিমধ্যে ঐ বাগানে আ¤্রপালি, মালয়েশিয়ান মল্লিকা, সুরমাইয়া ফজলি, পালমাল, হিমসাগর, হাড়িভাঙ্গা, বেলতোশসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম পাকা শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান জানান, ফরমালিন ও কেমিক্যালমুক্ত রসালো পাকা আম খেতে হলে নার্সারী বাদলের আম বাগানে চলে যাই। সেখান থেকে প্রয়োজনমত ফল ক্রয় করতে পারি। তবে এ বছর ৩০-৪০ মন আম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে ২০২০ সালে ২০০ থেকে ২৫০ মন আম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বাদল। বর্তমানে তার নার্সারীতে ফলজ গাছের চারার মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির আম, জাম, ছবেদা, কাঁঠাল, আতা, আমলকি, জলপাই, কামরাঙা, চালতা, মালটা, কমলা, শরিফা, ভিয়েতনামের নারিকেল চারা, পেঁপে, পেয়ারা, সুপারি, লিজু, আনার, কদবেল, থাই জামরুল, বিদেশি জাম্বুরা, থাই আমরুজ, লেবু, কাউ গাছের চারা রয়েছে। বনজ বৃক্ষের চারার মধ্যে মেহেগণি, চাম্বল, রেইনট্রি, আকাশমনি, সেগুন, ইউক্যালিপটাস, ঔষধি চারার মধ্যে নিম, হরতকি, বহেরা, ফুলের চারার মধ্যে রঙ্গন, গোলাপ, হাসনাহেনা, টগর, আলমন্ডা, জবা, বোতলব্রাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির চারা রয়েছে। তার এ বাগানে প্রতিনিয়ত ৬জন কর্মচারী কাজ করছে। তার প্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক বিক্রির পরিমান প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা। এ ব্যপারে মাহবুব ইসলাম বাদল জানান আমার সফলতার পেছনে রয়েছে অগাধ সাহস ও মনোবল। এ দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাটি। পরিচর্যা করলে মাটিতে সোনার ফসল ফলানো সম্ভব। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ বা সরকারি কোন দপ্তর থেকে কোন সুযোগ সুবিধা ও পরামর্শ পাইনি। অধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও সেচ ব্যবস্থা করতে পারলে আরো উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। প্রতিটি মানুষ বাজারমুখী না হয়ে নিজ নিজ বাড়ীর পরিত্যাক্ত জমিতে ফল ও শাক সবজির চাষ করার আহবান জানান। তিনি শুধু এ সকল কর্মকান্ডেই সীমাবদ্ধ নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার রয়েছে বেশ সুনাম। মেধা পরিশ্রমের মাধ্যমে শিকারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

Share.

Leave A Reply

Exit mobile version