নিজাম উদ্দীন (স্বাধীন): দেশজুড়ে সকলেই আমরা এক চরম সংকটের মোকাবেলা করছি। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অন্যান্য সকল দেশকেই এই অভূতপূর্ব বিপদসংকুল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আমাদের রোধ করতেই হবে। সর্বনাশা এই ভাইরাসের বিস্তার-রোধে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন রোগীদের সকলের থেকে আলাদা করে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে। তাদের কোয়ারেন্টাইন করা অপরিহার্য।
ভাইরাসের উপস্থিতি নিরূপণের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্টিং কিট উৎপাদন বা ক্রয় করে পর্যাপ্ত সংখ্যায় যোগান দিতে হবে। যাদের আগে থেকেই স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, তাদের জন্য বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন; অবশ্য, এ ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে নির্বিশেষে যে-কাউকেই আক্রান্ত করতে পারে। ব্যক্তিখাতে যেসকল সম্পদ নানা সেবামূলক কাজে নিয়োজিত, সেগুলোর সবই আজ সম্ভাব্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন। এ বিপদ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়া এবং এদের রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে, জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ ও অর্থনৈতিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে; কোনো-কোনো উদ্যোগকে প্রয়োজনে সরকারীকরণ করতে হবে।
সারা দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পৌরসভা ও নগরে স্বাস্থ্যসেবামূলক পরীক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। এই হিসাব অনুযায়ী, দেশজুড়ে মোট ৫,৩৪৬টি স্বাস্থ্য-পরীক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভেন্টিলেটর আমাদের ইমারজেন্সি ভিত্তিতে স্টকে রাখতে হবে। তৈরি পোশাকের শিল্পখাতটি আজ সম্ভাব্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বিদেশের ক্রেতা দেশগুলোয়, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে, আমাদের তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে গেলে, এ দেশের ৪১ লাখেরও বেশি সংখ্যক পোশাকশ্রমিক তাদের কর্মসংস্থান হারাবে, আর এ খাতটি ২০ বিলিয়ন ডলারের লোকসানে পড়বে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনায়, আমাদের সাবলম্বী হয়ে ওঠার উপর জোর দিতে হবে। বাইরের দেশের উপর নির্ভরশীল না থেকে, আমরা যেন নিজেরাই অর্থনৈতিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি, সে-ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।
বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরতা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। বাংলাদেশকে নিয়ে, অনেক দিক থেকেই, আমরা আশাবাদী হয়ে উঠতে পারি। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ আমাদের বিশাল জনসংখ্যা। নিজেদের দেশের অভ্যন্তরীন পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য করেই আমরা বিশ্ব-পরিসরে বড় এক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারি; সে সক্ষমতা ও সম্ভাবনা আমাদের রয়েছে। এই অভূতপূর্ব সংকটের সময়ে, বিশ্বজুড়ে সমস্ত যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করতে হবে। আরো বড় রকমের এক যুদ্ধে আমরা ইতিমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছি। এ যুদ্ধ কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়। এটা আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। এ যুদ্ধ এমন এক হামলার বিরুদ্ধে, যে-আক্রমণ পুরো মানবজাতির বিরুদ্ধে।