না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশ চলচিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা টেলি সামাদ। আজ শনিবার, ৬ এপ্রিল বেলা ১টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন মেয়ে সোহেলা সামাদ কাকলী। এদিকে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই নানান অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা।
গতকাল শুক্রবার শরীর বেশি খারাপ হলে রাত ১টার দিকে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ তার মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু আমাদের শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন টেলি সামাদ।
প্রসঙ্গত, ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা টেলি সামাদকে এর আগে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাইপাস সার্জারি করা হয়। এ ছাড়া গত বছরের ২০ অক্টোবর তার বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতেও জরুরি অবস্থায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে অসুস্থ হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন চিকিৎসক বলেছিলেন, টেলি সামাদের খাদ্যনালীতে সমস্যা রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার বুকে ইনফেকশন ছিল, ডায়াবেটিস ছিল অতিরিক্ত। রক্তের প্লাটিলেটও কমে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
সেখানে ১৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর বাসায় ফিরে পূনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন টেলি সামাদ। সেজন্য তাকে গত বছর ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময়ও সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন তিনি।
কিন্তু হঠাৎ করেই কয়েক দিন আগে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গতকাল অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়। এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবনের শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। জনপ্রিয় এই কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুতে চলচ্চিত্রসহ সংস্কৃতি অঙ্গনে বইছে শোকের মাতম।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন টেলি সামাদ। টিভি, চলচ্চিত্র ও মঞ্চে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা এবং গানের জগতেও তার অবাদ বিচরণ। ‘মনা পাগলা’ নামের একটি ছবির সংগীত পরিচালনাও করেছেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার তুখোড় ছাত্র টেলি সামাদের ছিল অভিনয়ের নেশা। সেই নেশার টানেই ১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। চার দশকে প্রায় পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন টেলি সামাদ।
তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘জিরো ডিগ্রি’ মুক্তি পায় ২০১৫ সালে। শেষ জীবনে চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন তিনি। সারাদিন বাসায়ই থাকতেন, টিভি দেখতেন, ছবি আঁকতেন। ব্যক্তিজীবনে এক মেয়ে ও এক ছেলের বাবা টেলি সামাদ।