বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি রুটে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টি বাস প্রতিনিয়ত চলাচল করে। এ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করে। রুপাতলী বাস টার্মিনাল ভবন থেকে শুরু করে ভিতরের সড়ক ও ভবনের বেহাল অবস্থার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পোহাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি একই ভোগান্তীর ফাঁদে বাস চালকরা ও মালিকরা । বিগত ২/৩ বছর যাবৎ রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে বিরাজমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। সাধারণ যাত্রীসেবা তো দূরের কথা, ৩/৪ বছর ধরে স্টান্ডে গাড়িও রাখার জায়গাটি পানির নিচে রয়েছে। কারণ ৬ মাস স্ট্যান্ড বাস চালকরা গাড়ি পার্কিং করলেও বর্ষার সময়ে বাকি ৬ মাস তাদের গাড়ি রাখতে হয় মূল সড়ক দখল করে। বর্ষা হলে হাঁটুর ওপর পানি জমে স্টান্ডের ভিতর। তখন গাড়িগুলো মহাসড়কের পাশে রাখতে বাধ্য হন চালকরা। এতে সড়কে যানযটের সৃষ্টি হয়। বরিশাল-পটুয়াখালী এবং বরিশাল-খুলনা ঝালকাঠি আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে টার্মিনালে প্রবেশের মুখে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছেন। একাধিক বাস চালক জানান, টার্মিনালে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে ও বের হতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এতে গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয় । তা ছাড়া গাড়ি পার্কিং করতে বা সাধারণ পথ যাত্রীদের চলাচলের জন্য স্টান্ডের সড়কটি বয়েছে বেহাল অবস্থায়। তবে ওই সড়কটি সংস্কার করার কোন উদ্যোগ নেই বাস মালিক সমিতি কর্মকর্তাদের। চালকরা জানান, বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে একাধিকবার বলা হলেও তারা এবিষয়ে কোন ভূমিকা রাখেননি। তাছাড়া বাস টার্মিনালের ভিতর বিদ্যুৎ সরবরাহের খুঁটিগুলোতে বাতি নেই। রাতে গোটা টার্মিনাল এলাকা অন্ধকার থাকে। এ সময় বখাটেরা স্টান্ডের ভিতরে ঢুকে মাদকের আড্ডা জমায় ও মাদক সেবন করে। অন্যদিকে লাখ লাখ টাকার গাড়ি রাখাও অনিরাপদ হয়ে পড়ে। প্রায় সময়ই গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়।রোববার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, একটু বৃষ্টি হলেই কাদাপানির ভেতর থেকে সাধারণ যাত্রীদের টিকিট কাউন্টারে যেতে হয়। এমনকি টার্মিনাল ভবনের প্রতিটি টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী।
টার্মিনালে যাত্রীদের বসার স্থানও দখল করে রেখেছে হকার নেতারা। এনিয়ে আনিস নামে এক যাত্রী জানায়, বাসস্ট্যান্ডে দুর্ভোগের কথা নতুন কি বৃষ্টি হলে হাটু ভিজিয়ে বাসে উঠতে হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, একাধিক বাসের মালিক অভিযোগ করে বলেন আমরা অনেকদিন যাবত সমস্যা সমাধানের জন্য বাস মালিক সমিতির নেতাদের জানালেও তারা কার্যকরী কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি বাস টার্মিনাল ভবনের দ্বিতীয় তলা বছরের পর বছর দখল করে রেখেছেন বাস- মিনিবাস- মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। এ কারনে বিভিন্ন রুটের কাউন্টারগুলো সড়কের পাশে কিংবা স্টান্ডের ভিতর স্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন মালিক সমিতি। এতে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
এবিষয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, মোঃ কাওসার হোসেন শিপনের মুঠোফোনে জানান, ইতিপূর্বে বাসস্ট্যান্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিসিসির কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কাজ শুরু করা হবে। বরিশাল জেলা বাস- মিনিবাস-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, অল্প কিছুদিন আগে আমি রুপাতলী বাসস্টান্ডে শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্ব পেয়েছি, বাস স্টান্ডের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।