মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের প্রধান সংগঠক দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম সচিবলায়ের বেসামরিক প্রধান বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রীসভার সাবেক প্রতিমন্ত্রী ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মনজুর এর ১ম মৃত্যু বাষির্কী পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার ২৫ মে আছরবাদ নগরীর রূপাতলী গ্যাস্টারবাইনস্থ বরিশাল ফিশিং মসজিদে তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পরিবারের পক্ষে দোয়া-মিলাদে উপস্থিত ছিলেন মরহুমের ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আলম ফরিদ।
প্রসঙ্গত : বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মনজুর গত বছরের ২৫ মে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক এপোলো) বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তাঁর চার ভাই, এবং তার স্ত্রী ডা: সুফিয়া বেগম, সেজো ভাইয়ের স্ত্রী দিলরুবা হুদা সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি স্ত্রী, চার ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ওই বছরের পরের দিন ঢাকার বনানীতে ২৬ মে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।
আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম মঞ্জু এর সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক পরিচয় : ছাত্রাবস্থায় বরিশাল বিএম কলেজ, ছাত্রলীগ, মুকুল ফৌজ, আওয়ামী লীগ, বরিশালের স্থানীয় সমস্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকার পর ১৯৬২ সালে শহরের প্রধান নির্বাচনী এলাকা হতে স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী, ১৯৫৮ হতে ১৯৭০ এর সবগুলো ঘুরনিবীত্যায় দুর্গত সেবার প্রধান উদ্যাক্তা, ১৯৭০ সনে বরিশাল ও মেহেন্দিগঞ্জ আসন থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিজ বাড়ীতে শহরের সমস্ত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বদের আহ্বান করে স্বাধীন দক্ষিণবাংলা সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সুচনাকারী, নবম সেক্টর গঠন, এর পরিচালনা, স্বয়ং অস্ত্রহাতে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে সক্রিয় অংশগ্রহন, ৭ই ডিসেম্বর বরিশাল শহর শত্র“মুক্ত করার যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারে প্রথম যোগাযোগ ও রেলওয়ে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
নুরুল আলম মঞ্জুরের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার নদমুলা ইউনিয়নের হেতালিয়া গ্রামে। বাবা প্রয়াত হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ ছিলেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। বাবার চাকরিস্থল বরিশালে তার জন্ম হয় ১৬ নভেম্বর ১৯৩৭ সালে। বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বরিশাল থেকে প্রকাশিত বিপ্লবী বাংলাদেশের প্রকাশক মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম ফরিদ জানান, তার ভাই নূরুল ইসলাম মঞ্জুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী ছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি ইকবাল হল (জহুরুল হক হলের) ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশাল আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি বরিশাল সদর থেকে এমএনএ (জাতীয় পরিষদ সদস্য) নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বরিশাল সদর থেকে থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।