• মার্চ ২৮, ২০২৩
  • Last Update ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩ ৯:১৫ অপরাহ্ণ
  • বাংলাদেশ

সিরাজগঞ্জে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা নেই গ্রামীণ জনপদে দূরত্ব না মেনেই বাজার করছেন স্থানীয়রা।

সিরাজগঞ্জে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা নেই গ্রামীণ জনপদে দূরত্ব না মেনেই বাজার করছেন স্থানীয়রা।

সেলিম রেজা: সিরাজগঞ্জ কাজ নেই, তাই বলে ঘরে বসেও থাকছেন না গ্রামীণ জনপদের মানুষগুলো। চা-স্টল, দোকানপাটের সামনে দলবেধে আড্ডায় মেতে আছেন তারা। আড্ডার আলচ্য বিষয়ও করোনা। অনেকেই একসঙ্গে বসে দেখছেন টেলিভিশন। যেখানে ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রচার করা হচ্ছে করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরুত্ব বজায় নিশ্চিত করার জন্য। অথচ এগুলো শুনছেনই না গ্রামের কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষেরা।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পূর্ব মথুরাপুর ও সদর উপজেলার শিয়ালকোল হাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মানুষগুলো কারণ ছাড়াই ঘরের বাইরে বের হয়ে বিভিন্ন স্থানে জটলা পাকিয়ে বসে আছেন। হাট-বাজারে গাদাগাদি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত রয়েছে শত শত মানুষ। এসব হাট বা বাজারে মানুষগুলোর বেশিরভাগ মাস্কও ব্যবহার করছেন না। রিকশা বা ভ্যানগাড়িতেও অপরিচিত একাধিক মানুষ চলাচল করছেন। পূর্ব মথুরাপুর গ্রামের একটি দোকানে আড্ডারত রেজাউল করিম ও জহুরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ঘরে আর কতক্ষণ বসে থাকবো।

গ্রামের মোড়ের দোকানে বসে বসে টিভি দেখি। গ্রামের অনেক মানুষই এখানে এসে ভিড় করে। গ্রামের সামাজিক ঝগড়া-বিবাদ হলেই এ গ্রামের কিশোর-তরুণেরা দলবেধে সেখানে ছুটছেন। সেক্ষেত্রে কোনো দূরুত্ব বজায় রাখা বা মাস্ক ব্যবহারও করছেন না তারা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল, এনামুল হক ও জিহাদসহ গ্রামের যুবকেরা এক কথায় উত্তর দেন, ‘আল্লাহ ভরসা।’ জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, পল্লী অঞ্চলের মানুষ এখনো এতটা সচেতন হয়নি। তাদের বোঝালেও বুঝতে চায় না। এদিকে, শনিবার (০৪ এপ্রিল) সদর উপজেলার শিয়ালকোল হাটে হাজারও ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলায় পরিণত হয়।

শত শত মানুষের ভিড় ঠেলে বেচাকেনা করছেন মানুষ। হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক মজিবর রহমান বলেন, আমাদের ক্ষেতের সবজি হাটে নিয়ে আসতেই হবে। ক্রেতাদের দূরে থাকতে বললেও তারা এসে ভিড় জমায়। শিয়ালকোলছাড়াও, শালুয়াভিটা, রতনকান্দি, বহুলী, পাইকোশা, কান্দাপাড়াসহ বিভিন্ন হাটে মানুষের উপচেপড়া রয়েছে। শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান শেখ বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক মানুষকে বোঝাচ্ছি। করোনা থেকে বাঁচার জন্য সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তারপরও মানুষ শুনছে না।

গ্রামের মানুষ এসব কিছু গুরুত্ব দিচ্ছে না। খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা বলেন, আমরা ব্যাপকভাবে গ্রাম পর্যায়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। কিছু মানুষ সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে আবার অনেকেই কিছু মনেই করছে না। এসব মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্কে কোনো প্রভাব ফেলছে না। বিশ্বজুড়ে মহামারিতে রূপ নেওয়া করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সরকারি নির্দেশনা এভাবেই উপেক্ষা করছে সিরাজগঞ্জের গ্রামীণ জনপদের মানুষ। নানা অজুহাত তৈরি করে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসছে তারা। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সচেতন মানুষগুলোও মেনে চলছে না সরকারি নির্দেশনা।

এসব কারণে ছোঁয়াচে এ রোগটির সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছেন চিকিৎসকরা। শহরের মেডিনোভা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আব্দুস সামাদ আজাদ খোকন বলেন, বিশ্বের কোনো কোনো দেশ করোনাকে প্রথমদিকে অবহেলা করেছিল। সেইসব দেশে এখন মহামারিতে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন শত শত প্রাণহানি ঘটছে। বাংলাদেশের মানুষ এখনও সেটা বুঝতে পারছে না। জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। গরুর হাট বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির হাট চললেও দূরুত্ব বজায় রেখে ও মাস্ক পড়ে কেনা বেচা করার জন্য বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহণ চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *