• মার্চ ২৮, ২০২৩
  • Last Update ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩ ৯:১৫ অপরাহ্ণ
  • বাংলাদেশ

বরিশালে মাস্ক তৈরি করছেন মিলিতা চৌধুরী

বরিশালে মাস্ক তৈরি করছেন মিলিতা চৌধুরী

হাট-বাজার ও বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতার জন্য প্রচারনা চালানোর পাশাপাশি হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজের তৈরি মাস্ক স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে বেশ অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মাস্ক আপা নামের খেতাব অর্জন করেছেন মিলিতা চৌধুরী।

জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার শিহিপাশা গ্রামের নারী কর্মী মিলিতা চৌধুরী (৩০) আগৈলঝাড়াসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার হাট-বাজার ও বাড়িতে ঘুরে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারনা চালিয়ে মাস্ক বিক্রি করেছেন। স্থানীয় গৈলা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, সারাদেশে করোনা আতঙ্ক দেখার পর সামর্থবানরা বাজার থেকে মাস্ক কিনে নিজেকে সুরক্ষা করতে ব্যবহার করলেও হতদরিদ্র কিংবা দিনমজুরেরা মাস্ক ক্রয় করতে পারছিলেন না। বাজারের একটি ভাল মাস্ক পঞ্চাশ থেকে একশ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা দরিদ্র-দিনমজুরদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। এরইমধ্যে নিন্ম আয়ের মানুষের মধ্যে করোনা প্রতিরোধে করনীয় বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচারনা চালানো ও ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে নিজের তৈরি মাস্ক বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেন শিহিপাশা গ্রামের দিনমজুর দানিয়েল চৌধুরীর স্ত্রী নারী কর্মী মিলিতা চৌধুরী।

মিলিতা চৌধুরী জানান, স্বামী-সন্তানসহ তার চার সদস্যের পরিবার। দিনমজুর স্বামীর একার আয়ে কোন রকম সংসার চলছিল। অর্থ সংকটে পুত্র সুর্য্য চৌধুরী (৯) ও কন্যা শশী চৌধুরীকে (৫) লেখাপড়া করাতে পারছিলেন না। এ সময় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা হোমল্যান্ডের সদস্য হয়ে তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষন গ্রহন করে সেলাই মেশিন কিনে তিনি বাড়িতে বসে নারী ও শিশুদের পোষাক তৈরী করে তা বিক্রি শুরু করেন। দিনমজুর স্বামীর আয়ের সাথে তার আয়ে গত ৩/৪ বছরের মধ্যে অভাবের সংসারে কিছুটা ভাল অবস্থা ফিরে আসে। ছেলে ও মেয়ে লেখাপড়াও শুরু করে।

মিলিতা বলেন, দেশে করোনা আতঙ্ক শুরু হওয়ার পর নিজ তাগিদ থেকে মানুষকে সচেতন করায় প্রচারনা শুরু করি। গ্রামে গঞ্জে কাপর বিক্রি করতে গিয়ে দেখি দিনমজুর, কামার, কুমার, রিকসাওয়ালা, কুলি, জেলেসহ অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ক্রয় করার ক্ষমতা না থাকায় তারা তা ব্যবহার করছেন না। তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই অল্পমূল্যে মাস্ক সরবারহ করার। পরবর্তীতে নারায়নগঞ্জ থেকে কাপর সংগ্রহ করে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরের মধ্যে মাস্ক তৈরী শুরু করি। এসব মাস্ক বাড়ি ও হাট-বাজারে পৃথক পৃথক দলে ভাগ হয়ে বিক্রি শুরু করলাম। কম মূল্য হওয়ায় বাজারে দিনমজুর ক্রেতা ছাড়াও মধ্যম আয়ের লোকজনের কাছেও মাস্কের ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে তিনজন নারী সহকর্মীকে নিয়ে রাতে মাস্ক তৈরী ও দিনে বাজারজাত করি। স্কুল বন্ধ হওয়ায় তার ছোট ভাই শুভ বাড়ৈ (১৪) ও ছেলে সুর্য্য বাজারে এসব মাক্স বিক্রি করে থাকে।

মিলিতা আরও বলেন, সরকারিভাবে শুধু প্রচারনা চালানো হয় কিন্তু কেউতো মাস্ক সরবারহ করে না। তাই আমি প্রচারনা চালানোর সাথে কমমূল্যে মাস্ক সুবিধা দিচ্ছি। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে এটি স্বাস্থ্য সম্মতভাবে তৈরী করা হয়েছে।

আগৈলঝাড়া উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজল দাশ গুপ্ত বলেন, হতদরিদ্র মানুষের কষ্টের কথা হতদরিদ্ররাই বুঝে, তাই মিলিতা গরীবের জন্য মাস্ক তৈরী করে এলাকায় ব্যাপক সারা ফেলেছে। মিলিতার করোনা বিরোধী প্রচারনা ও স্বল্পমূল্যে মাস্ক তৈরীকে স্বাগত জানিয়ে গৈলা মডেল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দুলাল দাশ গুপ্ত বলেন, করোনা মোকাবেলায় নিন্ম আয়ের মানুষের মাঝে মিলিতার প্রচারনা কার্যকর ভূমিকা রাখছে এবং সামর্থের মধ্যে থেকে মাস্ক ক্রয় করতে পারছেন। গৈলা বাজারের অসংখ্য ব্যবসায়ীরা বলেন, মিলিতা চৌধুরী পুরো এলাকায় এখন মাস্ক আপা নামেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বখতিয়ার আল মামুন বলেন, আগৈলঝাড়া ও আশপাশ এলাকা হতদরিদ্র অধ্যুষিত। এখানে বেশী দামে মাস্ক ক্রয়ের পর তা ব্যবহার করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই মিলিতা চৌধুবীর অল্প মূল্যের মাস্ক তৈরী ও সরবারহ ভাল একটি দিক। এছাড়া ডবল লেয়ার দিয়ে তৈরী করা মিলিতার মাস্ক স্বাস্থ্য সম্মত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *