শামীম মীর, দারিদ্রতা পিছু ছাড়ছিল না, অভাব ছিল নিত্য সঙ্গি। অনাহারে দিন কাটে পরিবারের সদস্যদের। অন্ধকার আর হতাশায় দিন কাটছিল বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের ভীমের পাড় গ্রামের মফসের হাওলাদারের পুত্র হতদরিদ্র থোকন হাওলাদারের (৪৫)। এমনি আবস্থায় খোকনকে আশার আলো দেখালো দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ। ব্যাংকের এর সহায়তায় দারিদ্রতাকে জয় করে আর্থিক স্বাবলম্বি হয়েছেন খোকন হাওলাদার। এলাকাবাসি জানান, খোকন হাওলাদার আজ মানুষের কাছে এক অনন্য দৃষ্ঠান্ত। খোকনের কাছে অনেকেই আসেন তার পরিকল্পনা জানতে। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, খোকন তার সততা ও পরিশ্রমকে পূজি করে এত দূল এসেছে। খোকন হাওলাদার জানান, পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থায় কিছু একটা করার সিদ্বান্ত নেই কিন্তু কোথায় পূজি পাবো। এক পর্যায়ে ৩০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে মাহিলাড়া বাজারে কাঁচা মালের ব্যবসা করার সিদ্বান্ত নেই। কিন্তু বড় বড় আড়তদারদের ভীরে সামান্য পূজি নিয়ে ব্যবসা করা ছিল খুবই কঠিন। ৩০ হাজার টাকা থেকে ব্যবসার জন্য ছোট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে তা সাজিয়ে ব্যবসা উপযোগী করার পরে হাতে সামান্য কিছু টাকা। এ সময় আত্বীয়-স¦জন, বন্ধু-বান্ধব কাছে কিছু ধর্না দিয়ে আর্থিক সাহায্য সহযোগতিা চাইলে দূর্দিনে কেউই আমার পাশে দাড়ায়নি। বরং সকলেই আমার বিপদ দেখে মুখ ফিরিয়ে নেন। নিজেকে খুব একা অসহায় মনে হত। ব্যবসা করার স্বপ্ন যেন মহুর্তেই হতাশায় নিমজ্জিত হল। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরার হল। সামান্য ১০/১৫ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা জমছিল না। ব্যবসার খুবই খারাপ অবস্থা। তিনি (খোকন হাওলাদার) বলেন, ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় আমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে আছি। এমন সময় হঠাৎ সালাম দিয়ে আমার সঙ্গে পরিচিতি হলেন দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ এর বিনিয়োগ কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম। পরিচয়ের পর তিনি মনোযোগ দিয়ে আমার ব্যবসার দৈন্যতার শুনলেন। এক পর্যায়ে জানালেন ”দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ,, মাধ্যমে দৈনিক ক্রয়-বিক্রয় স্বীমের অনূকূলে সৎ ও কর্মঠ ব্যবসায়ীদের সদস্য করে সহজ শর্তে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রদানের কথা। ওই প্রকল্পের ঋন গ্রহনকারী প্রতিদিনের আয় থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ দিয়ে ঋন পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। একথা শুনে আমি কিছুটা আশস্থ হলাম। পরের দিন ব্যাংকের ব্যাবস্থাপকের কাছে গিয়ে আলোচনা করে এই সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন করলাম। ব্যাংকের উদ্ধর্তন র্কমকর্তা আমার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এসে আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা শুনে এবং কিছু পরামর্শ দিয়ে আমাকে ঋন দিতে সম্মত হলেন।
শুরুতইে দেড় লাখ টাকা ঋন দিলেন। শুরু হল আমার নতুন পথচলা। ”দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ,,” ঋনের পুঁজি দিয়ে নতুন করে পুনরায় কাঁচামালের আড়ৎ ব্যাবসা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে ব্যবসায় সফলতা আসতে লাগল। দুঃচিন্তা আর হতাশাকে ছেড়ে ফেলে সততা, বিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমে হয়ে উঠলাম সফল ও স্বাবলম্বী ব্যবসায়ী। মাহিলারা বাজারেন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রসারিত করেছি। নিয়মিতভাবে ঋৃন গ্রহন পরিশোধকে মূল মন্ত্র হিসেবে ধারন করে,, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ থেকে ৭বার ঋন নিয়েছি। বর্তমানে ব্যাংকে ৪,৫০,০০০/=(চার লক্ষ পঞ্চাশ) হাজার টাকা বিনিয়োগ চলমান । আমার সংসারে ফিরে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। ব্যবসার পাশাপাশি ৪ লাখ টাকার ৫ টি গরু কিনে বাড়িতে গরুর ফার্ম দিয়েছি। ১৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে বসত বাড়ী নির্মান করেছি। ব্যবসায় ১৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক সুখে আছি। সফলতার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে খোকন জানান, সফলতার পেছনে রয়েছে সততা, দক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম। সঙ্গে ছিল,, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ এর পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগীতা। মাহিলাড়া গ্রামের দুলাল হোসেন (৪৫), মিজানুর রহমান (৬০), শাহাদাত হোসেন (৪৮)সহ অনেকেই বলেন, খোকন হাওলাদার জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটিয়েছেন ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারেনি। আজ সে দারিদ্রতাকে জয় করেছে। নিজে স্বাবলম্ভী হওয়ার পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছে। সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখছে। ব্যবসাকে অনেক বড় করেছে। আর্থিক দৈন্যতার সময় কোন আত্মীয় স্বজন তার পাশে দাড়ায়নি ।
ওই দূর্দিনে খোন হাওলাদারের পাশে ছিলে দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ। এলাকার নারী পুরুষ অনেকেই বলেন, খোকন হাওলাদার সমাজের অনুপ্রেরনা। তার দেখা দেখি অনেকেই আর্থিক দৈন্যতা দূরীকরনে খোকন হাওলাদারের দেখানো পথে হেটেছেন। খোকনের স্ত্রী মুন্নী বেগম (২৬) বলেন, আমরা ডিএমসিবিএল ঋৃনী। তারা ঋন না দিলে আমরা ঘুরে দাড়াতে পারতাম না। তাদের আর্থিক সহযোগীতার জন্য সুখের মুখ দেখেছি। তাদের আর্থিক সহযোগীতায় আমার স্বামী সফল ব্যবসায়ী হতে পেরেছে। আর্থিকভাবে স্ববলম্বী হওয়ার কারনে মেয়ে ইমা আক্তার (১৭) গৌরনদী সরকারী কলেজে ও ছেলে মোঃ রিজন হাওলাদার (১৪) দশম পড়াশোনা করাতে পারছি। ‘‘দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ লিঃ’’ গৌরনদী সহায়তার ফলেই আমাদের স্বপ্ন পুরন হয়েছে। মেয়ে ইমা আক্তার বলেন, আমি উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে সমাজ তথা দেশের জন্য কাজ করতে চাই। আমাদের সমাজ থেকে দারিদ্রতা দুর করে আলোকিত সমাজ গড়বো।