• জুন ৮, ২০২৩
  • Last Update এপ্রিল ১, ২০২৩ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
  • বাংলাদেশ

উজিরপুরে পরিচালিত হচ্ছে অনুমোদন বিহীন ক্লিনিক

উজিরপুরে পরিচালিত হচ্ছে অনুমোদন বিহীন ক্লিনিক

এইস, এস,সি ও এম,বি বিএস পাসের জাল সনদপত্র দিয়ে বছরের পর বছর ধরে ভুয়া এম,বি,এস ডাক্তার সেজে অসহায়, হতদরিদ্র রোগীদের সাথে প্রতারনার মাধ্যমে অপচিকিৎসা দিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম সাতলা গ্রামের মৃত আদম আলী সরদারের ছেলে ভন্ড প্রতারক মোঃ রেজাউল করিম।কখনো সে এম,বি,বিএস ডাক্তার,কখনো সে সাংবাদিক, কখনো সে টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক আবার কখনো সে ঢাকা ও বরিশাল শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার মালিক প্রকাশক হিসাবেও পরিচয় দিয়ে স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে । ভুয়া এম,বি,বি,এস ডাক্তার মোঃ রেজাউল করিমের অপচিকিৎসার স্বীকার ও স্বজন হারানোদের অভিযোগে এবং একাধিক অনুসন্ধানে জানা গেছে উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম সীমান্ত ও কোটালীপাড়া উপজেলার পুর্ব দক্ষিন সীমান্ত ঘেসা পশ্চিম সাতলা গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে “মায়ের দোয়া ক্লিনিক এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ” যেখানে বছরের পর বছর ধরে চলছে গ্রাম গঞ্জের সাধারন রোগীদের দালালের মাধ্যমে এখানে এনে অপচিকিৎসা দেওয়ার নানান কৌশল। তাদের থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় হাজার হাজার টাকা। অনুমোদনহীন এই ক্লিনিকে মোঃ রেজাউল করিম রোগীদেরকে ভর্তি করে চিকিৎসা ব্যায় বাবদ এক একজন রোগীর থেকে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। হিসাব করে দেখা গেছে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা আয় হয় এই ক্লিনিকে। এসব অবৈধ আয়ের সে কোন আয়কর দেয় না। আয়কর ফাঁকি দিয়ে অথবা আয়কর বিভাগকে ম্যানেজ করেই সে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে প্রতারক রেজাউল।এই ক্লিনিকে রোগীদের ভর্তির পরে চিকিৎসা প্রদান বা জটিল অপারেশনের কোন কেস ডায়রী লিপিবদ্ধ করে তার প্রমান রাখা হয় না।সেই সাথে রোগীদেরকেও কোন প্রমানপত্র দেওয়া হয় না,যা আইনত দন্ডনিয় অপরাধ পিরোজপুরের নাজিরপুর,পদ্মডুবি,তরুর বাজার, স্বরুপকাঠী,ইলুহার,গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া,টুঙ্গিপাড়া, উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী এনে ভর্তি করানো হয় মায়ের দোয়া ক্লিনিকে। তারপরেই শুরু হয় রোগীদেরকে তার অপচিকিৎসা দেওয়ার পালা। মোঃ রেজাউল করিমের অপচিকিৎসার স্বীকার হয়ে বিভিন্ন সময় যাদের জীবনহানি ঘটেছে বা ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছেন, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে রেজাউলের নামে মামলা করা হলেও দোর্দন্ড প্রভাবশালী রেজাউল সেসব মামলা থেকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে একাধিকবার। ঘটনা অনুসন্ধ্যানে গিয়ে জানা যায় বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার গ্রামের দিনমজুর মোঃ ফোরকান মিয়া তার ৬ বছরের শিশুপূত্র মোঃ হাসানের বাথরুমের রাস্তায় সমস্যা দেখা দিলে সে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে এবং ছোট ছোট ট্রলার লঞ্চে সর্বরোগে পারদর্শি ডাঃ মোঃ রেজাউল করিমের চোখ ঝলকানো সাইনবোর্ড দেখে বিগত ২৩ জুন শিশু হাসানকে নিয়ে রেজাউল করিমের মায়ের দোয়া ক্লিনিকে গেলে ১৮ হাজার টাকার চুক্তিতে রেজাউল করিম হাসানকে চিকিৎসা করাতে রাজি হয় এবং তার ক্লিনিকের দোতলায় নিয়ে হাসানের পায়ুপথে ছুরি ও এসিড জাতিয় পদার্থ দিয়ে অপারেশনে অদক্ষ রেজাউল কাটাছেরা করতে থাকে। এতে অবুঝ শিশু হাসান চিরতরে তার পায়ুপথের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং জীবন মৃত্যুর সন্দিক্ষনে চলে যায়। এ অবস্থায় হাসানের দরিদ্র পিতা সহায় সম্বল হারিয়ে হাসানকে নিয়ে ঢাকায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি করায় এবং তার পেট কেটে বিকল্প উপায় পায়ুপথ তৈরী করতে হয়। এ ঘটনার পরে হাসানের পিতা মোঃ ফোরকান মিয়া ভুয়া এম, বি,বি,এস ডাক্তার মোঃ রেজাউল করিমের নামে বরিশালের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে সি আর ১৯৩/২০১৯ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য বিজ্ঞ আদালত উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তদন্তের ভার দিলে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ শওকত আলী ও ডাঃ মোঃ মাকসুদুর রহমান যৌথ ভাবে তদন্ত প্রতবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, মোঃ রেজাউল করিম ” পিচব্লেন্ড ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি হাসপাতাল” থেকে এম,বি,বি,এস ( এস) ডিগ্রী অর্জন করেছেন বলে দাবী করেন। কিন্তু বাংলাদেশে মেডিকেল প্রাকটিসের লাইসেন্স প্রদানের একমাত্র আইনগত সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)’র প্রদত্ত কোন রেজিষ্ট্রেশন বা সনদপত্র দেখাতে পারে নাই ।অন্যদিকে “পিচব্লেন্ড ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি” নামক প্রতিষ্টানটি বাংলাদেশে বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেরও অনুমোদনকৃত নয় বলেও নিশ্চতি হওয়া গেছে । ভুক্তভোগীদের মধ্যে সাতলা গ্রামের মোঃ বেনজির বালী অভিযোগ করে বলেন তার বাবা আঃ লতিফ বালীকে রেজাউল ডাক্তার নামের এক দানব অপচিকিৎসা দিয়ে প্রায় হত্যাই করে ফেলেছিলো,কিন্তু পরবর্তিতে ঢাকায় ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে তার বাবার জীবন ফিরে পেতে হয়েছে।তাছারা নয়াকান্দি গ্রামের মতলেব হাওলাদার, ফরাজী বাড়ির শাহজাহান সরদার,রাজাপুরের নুরু হাওলাদার সহ অনেক রোগীরাই মানুষ হত্যাকরী ভুয়া এম,বি,বিএস,ডাক্তার মোঃ রেজাউল করিমের অপচিকিৎসায় মৃত্যুবরন করেছেন।এসব মৃত্যুবরন কারী রোগীদের পরিবারের লোকজন অসচ্ছল ও কম বুঝদার হওয়ার কারনে রেজাউলের বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপে নিতে পারেন নি। মানুষের জীবন নিয়ে তামাসা করা ভুয়া ডাক্তার রেজাউল করিম ২০০৩ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা দাখিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ৩ পয়েন্ট পেয়ে দাখিল পাশ (এস,এস,সি)করেছিলো। দাখিল পাশ পর্যন্তই তার শিক্ষা জীবন । এরপরে সে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে একটি এইচ,এস,সি পাসের সনদপত্র বের করে বা তৈরী করে,যা সম্পুর্নই জাল বা ভুয়া । মোঃ রেজাউল করিম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ,এস,সি পাসের যে সনদপত্রটি বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করেছে তাতে দেখা যায় ষ্টুডেন্ট আইডি নম্বর 04-0-11-165-023 । অন্যদিকে বাংলাদেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭ সালে 04-0-11-165-023 এই একই ষ্টুডেন্ট আইডি নম্বরে মানিকগঞ্জের মতিলাল ডিগ্রী কলেজ থেকে জিপিএ 1.85 পেয়ে বৈধ ভাবে এইচ,এস,সি পাশ করেছেন জনৈক মোহাম্মদ মোশারেফ হোসাইন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *