বরিশাল নগরীর পাশ ঘেঁষে বহমান কীর্তনখোলার পানি এখনো রয়েছে স্বচ্ছ এবং টলমলে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ নদীটির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এর তলদেশে জমে থাকা পলিথিন, প্লাস্টিক বর্জ্যের স্তরের কারণে নদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিবেশবিদরা বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীর তলদেশ থেকে বিভন্ন ধরনের বর্জ্য অপসারণ না করা হলে বরিশালেও সৃষ্টি হবে আর একটি বুড়িগঙ্গা নদী। নষ্ট হবে জীববৈচিত্র্য আর হুমকির মুখে পড়বে বরিশালের পরিবেশ।
জানা গেছে, ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘের কীর্তনখোলা নদীর উল্লেখযোগ্য অংশ বরিশাল শহর ঘেঁষে। শহরের গোটা ড্রেনেজব্যবস্থা এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্যযুক্ত পানি নগরের বিভিন্ন খাল হয়ে কীর্তনখোলায় যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন লঞ্চে জমে থাকা পলিথিন এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর মধ্যে। এতে করে মারাত্মক দূষণের কবলে এখন কীর্তনখোলা।
উল্লেখ্য, লঞ্চঘাট এলাকার নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে কীর্তনখোলার তলদেশে পলিথিন আর প্লাস্টিক বর্জ্যের পুরু স্তর জমে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসে। নদী খননের সময়ে বালু ও পলি মিশ্রিত পানির সঙ্গে উঠে আসছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য। ড্রেজারের কাটারে জড়িয়ে উঠে আসছে বিপুল পরিমাণে পলিথিন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রীরা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত পলিথিন ও প্লাস্টিকসহ হরেক পদের আবর্জনা লঞ্চে কিংবা পন্টুনে বসেই সরাসরি নদীতে ফেলছে। এমনকি লঞ্চগুলোকে পরিষ্কারের নামে এর স্টাফরাও সরাসরি নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। সেসব ময়লা-আবর্জনা পানিতে তলিয়ে নদীর তলদেশে আলাদা একটি স্তর তৈরি হয়েছে।
বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, কীর্তনখোলার পশ্চিম তীরে অবস্থিত বরিশাল নৌবন্দর এলাকার পলি ও বালু অপসারণ করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। ড্রেজিং করার সময়ে কাটারের সঙ্গে উঠে আসছে বিপুল পরিমাণের পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য। নৌবন্দরের টার্মিনাল এলাকা থেকে শুরু করে নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার আলাদা একটি স্তর তৈরি হয়েছে।
মাঝিরা জানান, প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় লঞ্চগুলো পরিষ্কারের নামে নিয়মিতই ময়লা-আবর্জনা নদীর বুকে ফেলা হচ্ছে, কেউ নিষেধও করছে না। শীতের সময় নদীবন্দর ও আশপাশের এলাকায় পানি কমে গেলে দেখা যায় কিভাবে মাটিতে পলিথিন আটকে রয়েছে। পানি ও ময়লা আটকে পচে দুর্গন্ধও ছড়ায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘নদীতে পলিথিন, প্লাস্টিকসহ ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য লঞ্চ কম্পানিগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই মানুষ নিজ থেকে ময়লা-আবর্জনা নদীতে না ফেলুক। আর সে লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে।’
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, ‘সব লঞ্চ কম্পানিকে নদীতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি লঞ্চ যাত্রীদের ফেলা বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রাখার ব্যবস্থা করেছে।’