ভিক্ষুকের বাড়িতে হঠাৎ চালের বস্তা, মাছ-মুরগি নিয়ে হাজির হলেন থানার ওসি। বিষয়টি দেখে চমকে গেলেন ওই ভিক্ষুকের পরিবারের সদস্যরা। রোববার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার এক ভিক্ষুক ১৫ দিন ধরে থানায় আসেন না। কেন আসেন না ওই ভিক্ষুক তা জানতে খোঁজখবর নেন চুনারুঘাট থানা পুলিশের ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান। পরে ওসি জানতে পারেন ওই ভিক্ষুক অসুস্থ।
এ খবর পেয়ে রোববার দুপুরে থানার অন্য পুলিশদের নিয়ে ভিক্ষুকের বাড়িতে ছুটে যান তিনি (ওসি আজমিরুজ্জামান)। পাশাপাশি ওসি জানতে পারেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি অসুস্থ হওয়ায় না খেয়ে আছে তার পরিবার। ফলে ভিক্ষুকের বাড়িতে যাওয়ার সময় দেশি মুরগি, বড় একটি রুই মাছ এবং ৫০ কেজি ওজনের একটি চালের বস্তা নিয়ে যান ওসি আজমিরুজ্জামান। ভিক্ষুকের বাড়িতে বাজার নিয়ে ওসি’র আগমন দেখে চমকে যান পাড়া প্রতিবেশীরা এবং একই সঙ্গে ভিক্ষুকের পরিবারের সদস্যরাও অবাক হয়ে যান। পরে ওই ভিক্ষুক আকসির মিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন ওসি। পাশাপাশি ভিক্ষুক আকসির মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে নগদ ১ হাজার টাকা দেন ওসি আজমিরুজ্জামান।
স্থানীয়রা জানান, চুনারুঘাট উপজেলার প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আকসির মিয়া বিভিন্ন অফিস-আদালতে ভিক্ষা করে বেড়ান। তার এক পা অকেজো। কৃতিম পায়ের চলাচল। এ অবস্থায় লাঠিতে ভর করে ভিক্ষা করেন তিনি। কিন্তু ১৫ দিন ধরে আকসির মিয়া অসুস্থ থাকায় বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। এরই মধ্যে রোববার দুপুরে তাকে(আকসির মিয়া) দেখতে আসে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার ওসি আজমিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুনারুঘাট থানা পুলিশের ওসি আজমিরুজ্জামান বলেন, আকসির মিয়া বিভিন্ন অফিস-আদালতে ভিক্ষা করে জীবন বাাঁচন। মাঝেমধ্যে দেখি নিজ উদ্যোগে রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন। তার ভেতর দায়িত্ববোধ দেখে অবাক হই। যে নিজে ভিক্ষা করে সে আবার নিজ উদ্যোগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে। আকসির মিয়া আমার কাছে এলে আমি ব্যস্ততার মধ্যে ২০-৫-১০০ যা পারি দেই। কিন্তু ১৫ দিন ধরে তাকে না দেখে একটু চিন্তিত হই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে অসুস্থ। ভাবলাম সে ভিক্ষা করেই সংসার চালাতো। সে যদি অসুস্থ হয় তাহলে কি খেয়ে আছে তার পরিবার। তাই আমি তার বাসায় যাই। যাওয়ার সময় কিছু বাজার সদাই করে নিয়ে গেছি আমি।
ওসি আজমিরুজ্জামান আরও বলেন, আমি আর কি করেছি, যা করেছি তা খুবই সামান্য। এটা আমার কাছে কর্তব্য বলে মনে হয়েছে। তবে ওই সময় আকসির আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। হয়তো তার বাসায় কেউ এভাবে বাজার নিয়ে উপস্থিত হয়নি কখনো। তাই আমাকে দেখে কেঁদে ফেলেছে আকসির। তবে সবচেয়ে বেশি উপকারটা যা হয়েছে তা হলো আকসির মিয়াকে এখন অনেকেই সহায়তা করতে চাইছেন এবং কি কেউ কেউ তাকে বাড়ি করে দিতে চাইছেন। বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করতে চান অনেকেই।