• জুন ৮, ২০২৩
  • Last Update এপ্রিল ১, ২০২৩ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
  • বাংলাদেশ

শেবাচিম হাসপাতাল বহিরাগতদের দখলে * পাচার হচ্ছে রোগীর খাবার ও সরকারী ওষুধ

শেবাচিম হাসপাতাল বহিরাগতদের দখলে * পাচার হচ্ছে রোগীর খাবার ও সরকারী ওষুধ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে গত বছর ২২৬ জন নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া সত্বেও প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না আগত রোগীরা। বরং নিত্য নতুন অনিয়মের খবর বের হচ্ছে সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র এই হাসপাতালটিতে।

একের পর এক অনিয়মতান্ত্রিক ঘটনায় মানুষ আস্থা হারাচ্ছে এ চিকিৎসা কেন্দ্রটির উপর। চিকিৎসকদের অবহেলা, কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা, ওষুধ ও খাবার চুরি এখন নিত্যনৈমন্ত্রিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ জানালেও আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগেরই প্রতিকার মেলেনি। সরকারীভাবে পর্যাপ্ত পরিমান ওষুধ সরবারাহ করা হলেও তা জুটছেনা রোগীদের ভাগ্যে। এসব ওষুধ বাহিরে বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন কতিপয় কর্মচারী ও শেবাচিমের সামনের এক শ্রেনীর ওষুধ ব্যাবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে. অপারেশন থিয়েটার থেকে এক শ্রেনীর অসাধু চিকিৎসকদের সহযোগিতায় কতিপয় ব্রাদারদের মাধ্যমে বিপুল পরিমান ওষুধ পাচার হচ্ছে বাহিরে। বিশেষ করে হাসপাতালের পঞ্চম তলার সার্জারী অপারেশ থিয়েটারের কয়েকজন ব্রাদার, অর্থপেডিক্স ওটির এমএলএসএস এবং সুমন নামের এক বহিরাগত ব্যক্তি রয়েছে ওষুধ চুরির র্শীষে। এছাড়াও বেশ কিছু চিকিৎসকও রয়েছে তাদের সহযোগি হিসেবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোগীর এক স্বজন বলেন, অপারেশন থিয়েটারে যেসব ওষুধ বাহির থেকে ক্রয় করে নেয়া হয় তার সিংহভাগই থিয়েটারের মধ্য থেকে গায়েব করে দেয় কতিপয় ব্রাদার। আর এ কর্মকান্ডগুলো ওটিতে থাকা কয়েকজন ডাক্তারের সহযোগিতা ছাড়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। সূত্রমতে, অপারেশনের রোগীদের জন্য বর্তমানে প্রায় সমস্ত ওষুধ সরকারীভাবে সরবরাহ করা হলেও ছোট খাটো অপারেশনের জন্য রোগীর স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয় লম্বা একটা সিøপ। অতিসম্প্রতি হাসপাতালে রোগীদের ওষুধ ও খাবার চুরি করে নিয়ে যাবার সময় দুই কর্মচারীকে হাতেনাতে আটক করেছে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ। হাসপাতালের প্রধান ফটকের সিড়ির নিচ থেকে কর্মচারী বহিরাগত সালমা বেগম ও বাহাদুর হোসেন নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে লোকবল সঙ্কটের নামে কতিপয় চিকিৎসকরা অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটককৃত ওই দুই ব্যাক্তি হাসপাতালের কোন স্টাফ না হলেও তারা নিয়মিতই ডাক্তারদের বিশেষ কর্মচারি হিসেবে কাজ করতেন। ডাক্তাররা ছোটখাটো কাজ এদের দিয়েই করাতেন। এর বিনিময়ে তারা ডাক্তারদের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতো। এদের বড় একটি চক্র গড়ে উঠেছে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে। ডাক্তারদের কাছ থেকে রোগীদের ওষুধের সিøপে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ লিখে বাহির থেকে কিনে আনতে বলতেন বাহাদুর। রোগীর স্বজনরা ওষুধ বাহির থেকে ক্রয় করে দিলেও তা রোগীর শরীলে ব্যাবহার করা হতোনা। প্রতিদিনই হাজার হাজার টাকার ওষুধ ও খাবার বাইরে বিক্রি করতো ওই চক্রটি। দুইজনকে আটক করা হলেও এ চক্রের মূল হোতারা রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে।

সূত্রমতে, পঞ্চম তলা থেকে প্রথমে সিড়ি দিয়ে একটি বাজারের ব্যাগ নিয়ে নামতে থাকেন চিকিৎসকদের দালাল বাহাদুর। ব্যাগটি দেখে নিরাপত্তাকর্মীদের সন্দেহ হওয়ায় কর্তব্যরত কর্মচারীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে বাহাদুর নামের ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তির ব্যাগ তল্লাশি করে তার ব্যাগে হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ ওষুধ পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে বাহাদুর বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে ওষুধগুলো বাহিরে বিক্রির জন্য দিয়েছেন। তবে কোন চিকিৎসকরা দিয়েছেন তার নাম বলেননি বাহাদুর। এর কিছুক্ষন পরেই সালমা বেগম নামের এক বৃদ্ধমহিলা হাতে করে দুটি বাজারে ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি থেকে নেমে যাওয়ার সময় তাকেও সন্দেহভাজন হলে ডেকে ব্যাগ তল্লাশি করে দেখা যায়-হাসপাতাল থেকে রোগীদের দেওয়ার জন্য ডিম, মাংস, মাছ, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন খাবার রয়েছে ওই ব্যাগে। পরে তাকেও হাতেনাতে আটক করে মেডিক্যালে দায়িত্বে থাকা এসআই নাজমুলের সহযোগিতায় কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়। সূত্রে আরও জানা গেছে, মাত্র একদিনের মধ্যেই অদৃশ্য কারণে আটককৃতরা মুক্তি পেয়ে যায়। হাসপাতালের কর্মচারী শাকিল ইসলাম বলেন, শুধু এই দুই ব্যাক্তিই নয়; হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে পাঁচ তলায় অপারেশন থিয়েটারে রয়েছে বহিরাগত দালালের ছড়াছড়ি। এগুলো হাসপাতল কর্তৃপক্ষ দেখে না ভান করেছেন।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ ও খাবার পাচারের সময় আটককৃত দুইজনকেই পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আটককৃতরা কেউ আমাদের হাসপাতালের কর্মচারী নয়। এধরনের আরও কেউ থাকলে বা হাসপাতালের কেউ তাদের প্রশয় দিলে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সময়ে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগের ইনচার্জের কক্ষে মজুদ করা বিপুল পরিমাণ সরকারী ওষুধ জব্দ করেছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। ওইসময় ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিলকিস বেগমকে আটক করা হয়েছিলো। এছাড়া হাসপাতালের চতুথ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারের ৩ নম্বর পুকুর থেকেও রোগীদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সরকারীভাবে বরাদ্দ করা বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ সরকারী ওষুধ উদ্ধার করা হয়। এসব সরকারী ওষুধ রোগীদের মধ্যে বিতরণ না করে আত্মসাতের জন্য মজুদ করেছিল ওয়ার্ডের দায়িত্বরতরা। জব্দ করা ওষুধের বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। সূত্রমতে, প্রতিবছর মেডিক্যালের রোগীদের জন্য সরকারীভাবে কোটি কোটি টাকার ওষুধ বরাদ্দ দেয়া হলেও এসব ওষুধ পাচ্ছেন না রোগীরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *