সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য এবং সালাত ও সালাম বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবিগণের প্রতি।
শাবান মাস একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। রসুলে পাক (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিস ও আমল থেকে বোঝা যায়, এ মাসটির নিজস্ব ফজিলত থাকার সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস। মাহে রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস হিসেবে মুসলমানদের কাছে শাবান মাস অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত মাস বলে বিবেচিত। যার কারণে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলে পাক (সা.) কে রমজান ব্যতীত এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি, যত বেশি রোজা তিনি শাবান মাসে রাখতেন।’ রসুলে পাক (সা.) হঠাৎ করে রমজানে রোজা রাখতে শুরু করলে রসুলে পাকের কোনো কষ্ট হবে না তবে উম্মত যদি হঠাৎ করে আগের কোনো প্রস্তুতি ছাড়া রোজা শুরু করে দেয়, উম্মতের জন্য কষ্ট হতে পারে। সে জন্য উম্মতের কষ্ট লাঘব করার জন্য নিজে রোজা রেখেই উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘আমি শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেছি। তোমরা আমাকে অনুসরণ করে শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখ, তাহলে রমজানের ফরজ রোজা রাখতে তোমাদের কষ্ট হবে না।’ এরকমভাবে রমজানে দিনে রোজা এবং রাত জাগরণ করে যেন ইবাদত করা যায় তার জন্য রমজানের আগে লাইলাতুল বরাতের রাতেও রাত জাগরণ ও দিনে রোজা রাখাকে পছন্দ করেছেন। যাতে রমজানের রাত-দিনের ইবাদতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে ও অস্বস্তিকর পরিবেশের সম্মুখীন হতে না হয়। মূল কথা হলো, রমজান শুরু হওয়ার আগে শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রেখে ও অন্য ইবাদত করার মাধ্যমে রমজানের ইবাদতের জন্য একটি বাহ্যিক তথা শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।
শারীরিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে রমজানের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত পাওয়ার যোগ্য হওয়ার জন্য একটি আত্মিক প্রস্তুতিও রয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এ রাতে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি নজর দেন (যারা ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তাওবা করেন) সবাইকে মাফ করে দেন একমাত্র মুশরিক এবং হিংসুক ছাড়া।’ লাইলাতুল বারাতের রাতে ক্ষমাপ্রাপ্তির মাধ্যমে রমজানের রহমত, মাগফিরাত, নাজাত পাওয়ার জন্য পরিপূর্ণভাবে শিরক এবং হিংসা থেকে মুক্ত হতে হবে। বর্তমানে লাইলাতুল বরাত পালন করা হলেও এ রাতের ফজিলত পাওয়ার জন্য আমরা শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত হতে পারিনি বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা কত ধরনের শিরকে লিপ্ত আছি, তা একটু চিন্তা করা উচিত। এ শিরক থেকে তওবা করে মুক্ত না হয়ে লাইলাতুল বরাত পালন করা হলে কতটুকু লাইলাতুল বরাতের ফজিলত অর্জন করা যাবে তা আপনাদের বিবেকের কাছে এ হাদিসের আলোকে প্রশ্ন রইল। এভাবে বর্তমান মুসলিম সমাজে এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে যেভাবে হিংসা ও বিদ্বেষের দৃষ্টিতে দেখে সাধারণত এক শত্রু অন্য শত্রুকেও এভাবে হিংসা-বিদ্বেষের দৃষ্টিতে দেখে না।
এমতবস্থায়, লাইলাতুল বরাতের ফজিলত পাওয়ার জন্য শিরক এবং হিংসা থেকে মুক্ত হওয়ার যে দুটি শর্ত রয়েছে সে দুটি শর্ত মেনে যদি আমরা শিরক এবং হিংসা থেকে মুক্ত হতে পারি তাতে লাইলাতুল বরাতের ফজিলত পাওয়া যাবে এবং রমজানে এবাদত করার জন্য যেন পূর্ব প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হলো। এতে রমজানের রহমত, মাগফিরাত, নাজাত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম সমাজে অনৈক্যের কারণে যে কলহ, বিবাদ, অশান্তি বিরাজমান রয়েছে তা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে।