• মার্চ ২৮, ২০২৩
  • Last Update ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩ ৯:১৫ অপরাহ্ণ
  • বাংলাদেশ

বরিশালের একমাত্র বক্ষব্যাধিহাসপাতাল নিজেই ব্যাধিতেআক্রান্ত!

বরিশালের একমাত্র বক্ষব্যাধিহাসপাতাল নিজেই ব্যাধিতেআক্রান্ত!

বরিশালের একমাত্র বক্ষব্যাধিহাসপাতাল নিজেই ব্যাধিতেআক্রান্ত!
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ অযত্ন ও অবহেলায় ব্যাহত হচ্ছে বরিশাল বিভাগের একমাত্র বক্ষব্যাধি (টিবি) হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। জরাজীর্ণ ভবন, জনবল সংকট আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে এখানে। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই এখন যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত। এমনকি মাঠ, দিঘী আর গাছপালায় ভরা হাসপাতাল কমপ্লেক্স এলাকায় নির্মিত ক্লিনিকের অবস্থাও বেহাল। ফলে সেখানে কাঙ্খিত সেবাতো দূরের কথা ন্যূনতম ভরসাও রাখতে পারছে না সাধারণ জনগন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর উত্তর অঞ্চলের আমানতগঞ্জে ১১ একর জমিতে ষাটের দশকে হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে কিন্তু ২০ শয্যার এ হাসপাতালে ১৬টির মধ্যে ১২টি পদে কাগজে-কলমে জনবল থাকলেও বাস্তবে তা নেই। হাসপাতালের সহকারী নার্স পদে তিনজনের স্থলে একজনও নেই, কুকের দু’টি পদের একটি শুন্য। ঝাড়ুদারের দুইটি পদের মধ্যে একজন ডেপুটেশনে সিভিল সার্জন অফিসে আর অন্যজন সদর হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। সবমিলিয়ে অনুমোদিত ১৬টি পদের ছয়টি পদই শুন্য রয়েছে।
তবে সিনিয়র স্টাফ নার্সের তিনটি পদের স্থলে ডেপুটেশনে একজন আসায় একজন বেশি রয়েছেন। অফিস সহকারীর পদ না থাকলেও সে পদে ১০ বছর আগে ডেপুটেশনে এসে দায়িত্ব পালন করছেন এক নারী। হাসপাতালের বক্ষব্যাধি ক্লিনিকেও ১৭টি পদের বিপরীতে ১৪জন কর্মরত। গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র কনসালট্যান্ট (টিবি অ্যান্ড লেপ্রোসি) ও সহকারী নার্সের একটি করে পদ থাকলেও সে দু’টি শুন্য রয়েছে। নার্সবিহীন ক্লিনিকে মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসা সেবা চলছে। এ্যাম্বুলেন্স না থাকায় চালকের পদটিও শুন্য রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংস্কারের অভাবে স্যাঁত স্যাঁতে ভবনের বিভিন্নস্থানে পলেস্তরা খসে পরছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাবে সব জায়গায় ময়লার স্তুপ জমেছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মাসুমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, সুইপার ও গার্ড না থাকায় নোংরা ও অরক্ষিত থাকছে হাসপাতাল কমপ্লেক্স। ভবনের অবস্থা বেহাল হওয়ার কারণে বৈদ্যুতিক বাতিও জ্বলছে না। ফলে মাদকসেবী ও বখাটেদের উৎপাতে নারীদের রাতে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে থাকা অনেকাংশে ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১৪ সালে নারী ও পুরুষ রোগীদের জন্য আলাদা এবং স্পেশালাইজড দু’টি এমডিআর কক্ষ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। ক্লিনিকে রয়েছে ল্যাবরেটরি, জিন এক্সপার্ট কক্ষ ও এক্স-রে মেশিন। ম্যানুয়াল পদ্ধতির এক্স-রে মেশিনটির জন্য বরাদ্দ কক্ষে রেডিয়েশন রোধক কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরো ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পরছে, দরজা-জানালাগুলোও ভাঙা।
হাসপাতালের রোগী আসমা বেগম (৪৫) জানান, টয়লেটের দরজা ভাঙা। ওয়ার্ডে জানালার গ্লাস না থাকায় ভেতরে বাতাস আসছে। সব সময় চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছেনা। তাছাড়া হাসপাতালে ল্যাব না থাকায় বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকের এ দুরাবস্থার বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, সীমিত জনবল দিয়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিক মিলে ইনডোর এবং আউটডোরে সেবা চালু রয়েছে। ক্লিনিকটিতে জুনিয়র কনসালট্যান্ট নেই। ফলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আর পদ না থাকায় গার্ড দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সম্প্রতি চিঠির মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সরেজমিনে এসে বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *