• এপ্রিল ১, ২০২৩
  • Last Update ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩ ৯:১৫ অপরাহ্ণ
  • বাংলাদেশ

বরিশাল কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত কবিরকে হত্যা করা হয়েছে*সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের দাবি

বরিশাল কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত কবিরকে হত্যা করা হয়েছে*সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের দাবি

বরিশাল কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত কবিরকে হত্যা করা হয়েছে* সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী কবির সিকদার আত্মহত্যা করেনি, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিহত কবিরের স্ত্রী হনুফা বেগম এ দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্ত্রী বলেন, আমার দীর্ঘবিশ্বাস সে (কবির) কখনও আত্মহত্যা করতে পারেনা। সে তার স্ত্রী ও সন্তানকে খুব ভালবাসতেন। যখনই দেখা করতাম আমাদের সব সময় সে সাহস দিতো। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তার সাথে দেখা করি এবং সে তার বড় মেয়েকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছে, কয়েকটাদিন পরে আসতেছি বাবা। আমার জন্য দোয়া করো। সেই মানুষটা কোনভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। যদি আত্মহত্যাই করে থাকে তাহলে আমার প্রশ্ন-কারাগারে একজন আসামির আত্মহত্যা করার গোপন জায়গা আছে। যেখানে পুলিশের নজর পরেনা। তিনি দাবি করেন, তার স্বামীকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। তাহলে কারাগারেও একজন আসামির জীবনের নিরাপত্তা নেই।

তিনি আরও বলেন, গত ২৮ ফেব্রয়ারী তার (কবির সিকদার) সাথে দেখা করতে এসে পাঁচবার টিকিট কেটেও তার দেখা পাইনি। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছে কবিরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আবার কখনও বলে টিকিট হারিয়ে গেছে। বিকেল চারটার দিকে তারা আমাকে জানায়, কবির শেবাচিম হাসপাতালের প্রিজন সেলে অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তখন শেবাচিমে গেলে পুলিশ তাদের লাশ ঘরের দিকে নিয়ে যায়। লাশ দেখিয়ে বলেন, কবির আত্মহত্যা করেছে। তাহলে সকাল থেকে কেন কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সত্য ঘটনা আড়াল করে হয়রানি করেছে। অসুস্থ্যতার কথা কেন জানানো হয়নি, তাও প্রশ্নবিদ্ধ। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে কবির হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত কবিরের নাবালিকা দুই কন্যা সন্তান মাইমুনা (৫) ও একবছরের মাইসাসহ তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন পূর্বক কবিরের হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিচার চেয়ে নিহতের স্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কারা মহাপরিদর্শক, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি প্রিজন, পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত কবিরের স্ত্রী হনুফার বক্তব্য শেষে কবিরের ভাই আব্দুল জলিল বলেন, তারা লাশ ঘরে গেলে তাদেরকে ঠিকমতো লাশ দেখতে দেয়নি কারা পুলিশ। এরমধ্যে একনজর দেখা কবিরের বুকে ও দুই হাতে কালো আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন তারা। জলিল আরও বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী দুপুর পৌনে দুইটার দিকে কবিরকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়। কর্মরত চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কবিরকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছে তার দেড় থেকে দুইঘন্টা আগে তার মৃত্যু হয়েছে। এখানে জলিল প্রশ্ন করে বলেন, দিনভর কারা কর্তৃপক্ষ কেন তাদের সাথে তথ্য গোপন রেখে এই লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছে। এর রহস্য কি?

তিনি আরও বলেন, কবির সিকদার (৪০) ভোলা জেলার মনপুরা থানা এলাকায় চুরির ঘটনায় ১৯৯৯ সালের একটি মামলায় ১৯ বছর পর ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয়। ওই ঘটনায় তার ১০ বছরের সাজা হয়। এরপর তাকে পিরোজপুর জেলে নেয়া হয় এবং পরে বাদীর স্থানীয় ঠিকানা অনুযায়ী ভোলা জেলে পাঠানো হয়। সেখানে প্রায় ৩/৪ মাস থাকার পর কবিরের অসুস্থ্যতার কারণে বরিশাল কারাগারে পাঠানো হয়। সে বরিশাল কারাগারে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক ছিলো। মৃত্যুর সাতদিন পূর্বে তার সাথে দেখা করে জানানো হয়, ৫ মার্চ তার জামিন হয়ে যাবে। সেই লোক কিভাবে আত্মহত্যা করে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

কারাগার থেকে মাসিক হাজিরার জন্য কোট হাজতে আসা একাধিক হাজতির উদ্বৃতি দিয়ে আব্দুল জলিল বলেন, কবির সিকদার টাকার বিনিময়ে রান্ন ঘরের কাজ বাদ দিয়ে তাকে ঝাড়–দারের কাজ দেয়া হয়। সে সময় মতো জেলাকে টাকা দিতে না পারায় সিনিয়র জেল সুপার জেলারকে ভাগের টাকার জন্য চাঁপ দিলে জেলার ক্ষিপ্ত হয়ে কবির সিকদারকে তার কক্ষে এনে বেধম মারধর করে। এ কারনেই কবিরের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে সেই হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, গত ১ মার্চ কারা ভবনের পরিত্যক্ত বন্ধ রান্নাঘরের আড়ার সাথে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন কবির সিকদার নামের ওই কয়েদী। ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী কবির পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া কলেজ মোড় এলাকার বাসিন্দা দলিল উদ্দিনের পুত্র। জেল সুপার আরও বলেন, কবির কারাগারের ঝাড়ু দারের কাজ করতেন। ঘটনারদিন দুপুরে তাকে নির্ধারিত স্থানে না পেয়ে খুঁজতে শুরু করেন কারারক্ষীরা। পরে তাকে কারা অভ্যন্তরে বন্ধ থাকা ডিভিশন ভবনের রান্নাঘরের আড়ার সাথে গামছা দিয়ে ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে প্রথমে জেল হাসপাতালে এবং পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *