• মার্চ ২৫, ২০২৩
  • Last Update ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩ ৯:১৫ অপরাহ্ণ
  • বাংলাদেশ

দক্ষিণাঞ্চলে দখল দুষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদী ও খাল

দক্ষিণাঞ্চলে দখল দুষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদী ও খাল

দক্ষিণাঞ্চলে দখল দুষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদী ও খাল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল:-  প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখল ও দুষণে নাব্যতা হারিয়ে ক্রমেই অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের এক সময়ের খরস্রোত নদী ও খাল। দখলকারীদের রাক্ষুসে থাবা এখনই থামানো না গেলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদী মাতৃক এ অঞ্চলের অধিকাংশ নদী ও খাল।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলার গৌরনদী উপজেলার মধ্যদিয়ে বহমান খরস্রোত পালরদী নদী দখল ও দুষনে এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। অস্তিত্ব হারাতে বসেছে গৌরনদীর ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা পালরদী নদী। নাব্যতা হ্রাসের কারণে নদীর কোথাও এখন হাঁটু পানি। ঢাকা থেকে যাত্রীবাহি লঞ্চ এখন আর গৌরনদী হয়ে তার শেষ গন্তব্যস্থল দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত ব্যবসায়ীক বন্দর টরকীতে যেতে পারছেনা। সূত্রমতে, গতবছরের নভেম্বর মাস থেকে লঞ্চ থাকে টরকী থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দুরবর্তী কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া স্টেশনে। পালরদী নদীতে এখন আর চলতে পারছেনা বড় কোন নৌযান। ২০/২৫ বছর ধরেই শুকনো মৌসুমে এ অবস্থা চলছে। ফলে টরকী বন্দর, কসবা গো-হাট, গৌরনদী বন্দরের ব্যবসায়ীরা গবাদী পশু ও বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগে পরেছেন। লঞ্চ যাত্রীরাও পরেছেন মহাবিপাকে। আগে টরকী থেকে গৌরনদী হয়ে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করতো। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে শুধুমাত্র এ রুটে মাত্র দুইটি লঞ্চ যাতায়াত করছে। গত কয়েক বছর যাবত গৌরনদীর হোসনাবাদ বাজার থেকে নদী খনন শুরু করে নৌপরিবহন অধিদপ্তর কিন্তু এ কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর উভয় তীরে জেগে ওঠা চর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন ঘর-বাড়ী, দোকান-পাটসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। তারা জাল কাগজপত্র তৈরী করে সরকারী খাস জমির মালিকানা দাবী করছেন। এমনকি কয়েকজন প্রভাবশালীরা গৌরনদী, টরকী বন্দরসহ বিভিন্নস্থানে নদী দখল করে পাকা দালান তৈরী করেছেন। ময়লা আবর্জনা ফেলে নদী দুষন করা হচ্ছে। সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণে জনসাধারনের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পালরদী নদী দখল ও দুষনের বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদা নাছরিন বলেন, নদী দখল ও দুষনকারীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। এদের বিরুদ্ধে সারাদেশের ন্যায় অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
একইভাবে বিভাগের ঝালকাঠীর কাঠালিয়া উপজেলা সদর এলাকার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া শতবছরের একটি সরকারী খাল দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীরা। খালের পারে সরকারী জমিসহ খালের একাংশ দখল এবং অবৈধ ভবন উঠলেও প্রশাসন তা উচ্ছেদ করতে পারছেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া সিকদার খালের একাংশ দখল করে গড়ে তুলেছেন পাকা দালানসহ বহুতল ভবন। সূত্রমতে, জেলার অভ্যন্তরীণ নৌপথ হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে এ খালটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। খালের পানি দিয়ে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন। এছাড়া এ খাল দিয়ে উপজেলার বাজারগুলোতে কার্গো, ট্রলার ও বড় বড় নৌকার মাধ্যমে পন্য আমদানি রপ্তানি করা হয়। খালের প্রায় ৫০ ফুট অবৈধভাবে দখল করে নিজের বসবাসের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ভবনের বাথরুমের মলমূত্রের ট্যাংকি খালের মধ্যে দেয়ায় পানির সাথে মলমূত্র মিসে দুষিত হচ্ছে খালের পানি। সরকারী খাল দখল করে ভবন নির্মান করলেও প্রভাবশালী চেয়ারম্যান কিবরিয়া সিকদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না স্থানীয় প্রশাসন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দরা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে ক্ষমতাসীন দলের ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যান কিবরিয়া সিকদারের মতো কিছু জনপ্রতিনিধি থাকলেই যথেষ্ট।
অপরদিকে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী জেল খালসহ অধিকাংশ খাল কতিপয় প্রভাবশালীর আগ্রাসী থাবায় দখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া খালের মধ্যে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এখন ময়লার ভাগাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিকাংশ খাল। নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির জেলার আহবায়ক এনায়েত হোসেন বলেন, নদী ও খাল দখলকারীরা যতো বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নতুবা খুব শীঘ্রই নদী ও খালের জেলা বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ নদী ও খাল মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *