স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল :- সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে বরিশাল শহরের দক্ষিণপ্রান্তের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুটিতে রাতের বেলা যানবাহন চলাচল ক্রমশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেতুটি ১৩৪টি লাইটপোস্টের সকল বাতি দীর্ঘদিন ধরে বিকল থাকার কারণে যেকোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেতু লাগোয় বাসিন্দা ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ অবহিত থাকলেও কার্যকরী কোন উদ্যোগ নিচ্ছেনা। এমনকি সেতু ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করা হলে তাতেও কোন সুফল আসছে না। ফলে রাতের বেলা সেতুটির পরিবেশ ভুতুরে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো সেতু জুড়ে কোনো বৈদ্যুতিক আলো সরবরাহ নেই। সন্ধ্যার অন্ধকার নামার পর দপদপিয়া সেতু থেকে চলাচলকারী জনসাধারণ আতংক নিয়েই চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে, আলো না থাকার সুযোগে সেতুর ওপর জমায়েত ঘটে আশেপাশের এলাকার অন্ধকার প্রিয় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী চক্রের। তাছাড়া পুলিশেরও কোনো নজরদারি না থাকার কারণে রাতের আঁধারে সেতু এলাকায় এক শ্রেণির বখাটে আর ছিনতাইকারীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। যার ফলে দপদপিয়া সেতুতে ঘুরতে আসা বিনোদন পিয়াসীরা পায়ে হেঁটে সেতু পার হলে অথবা কেউ ছোট যানবাহনে (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, টেম্পু ও মোটরসাইকেল) যাতায়াত করলে তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়া হচ্ছে।
সূত্রমতে, সড়ক পথে বরিশাল-ঝালকাঠি-নলছিটি-পটুয়াখালী-কুয়াকাটসহ পাঁচ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটে যাতায়াতের পথ দপদপিয়া সেতুতে বৈদ্যুতিক আলোহীন ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার বিরাজ করায় সাধারণ পথচারীরা গাড়ির নিচে চাঁপা পড়ে যেকোনো সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর আগে দপদপিয়া সেতুর বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার চুরি করে নিয়েছে সংঘবদ্ধ চোরচক্র। এরপর থেকে বৈদ্যুতিক লাইনবিহীন সবগুলো লাইটপোস্টের আলো সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে সওজ কর্তৃপক্ষ অবগত হওয়ার পর বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর (সাহেবেরহাট) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করলেও সেতুতে আলো দিতে আর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তীতে সওজ বিভাগ থেকে আলাদা লাইন টেনে মাত্র ৩০টি লাইট পোস্টে আলো সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও কিছুদিন যেতে না যেতে অস্থায়ী লাইটগুলিও পুনরায় বিকল হয়ে যায়।
দপদপিয়া সেতুতে টোল আদায়ে নিয়োজিত রাফি খান বলেন, আমরা দপদপিয়া সেতুর ইজারা নিলেও রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা সংস্কারের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের। অভিযোগ আকারে তিনি বলেন, এই সেতু দিয়ে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব আয় করলেও টোল আদায়ের জন্য স্থায়ী কোনো টোলঘর বা টোল আদায়কারীসহ সাধারণ যাতায়াতকারী নারী-পুরুষের ব্যবহারের জন্য সামান্য একটি বাথরুম পর্যন্ত করা হয়নি। তাই যাত্রীদের মতো আমরাও নানা দুর্ভোগ নিয়ে কাজ করছি।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালেদ সাহেদ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল কিন্তু সেতুতে আলো ব্যবস্থা করতে যে সরঞ্জাম প্রয়োজন তা তাদের নেই। তাছাড়া পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার কারণে ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা। তবে ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই বিকল্পভাবে আলোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
