স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নামে মাত্রই দুঃস্থ মানবতার হাসপাতাল। মানবতার বদলে ওই হাসপাতালে অপচিকিৎসায় একের পর এক প্রাণহানীর ঘটনা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় অপারেশন টেবিলে এক প্রসূতির মৃত্যুর দুইঘন্টা পর নিজেদের দায় এড়াতে নাটকীয়ভাবে অক্সিজেন লাগিয়ে মৃত গৃহবধূকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা বলেন, প্রসূতি অনেক আগেই মারা গেছে। তার মরদেহে অক্সিজেন দিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা পর এখানে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গোপনে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সুমন ফকির, কর্মকর্তা রুস্তুম আলী ও গোলাম মোস্তফা তাদের নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্সযোগে মৃত গৃহবধূ পলি অধিকারীর (২২) মরদেহ নিয়ে যান তার মামা বাড়ি গৌরনদী উপজেলার দোনারকান্দি গ্রামে। পরে মৃতের মামা দধিরামের বাড়িতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে মরদেহের সৎকার করা হয়। বিষয়টি যাতে প্রশাসনের নজরে না আসে সেজন্য তড়িঘড়ি করে মরদেহের সৎকার করা হয় বলে জানিয়েছেন পলির মামা দধিরাম।
বিষয়টি জানাজানি হলে প্রসূতির স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত পলি অধিকারী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের লিটন অধিকারীর স্ত্রী।
পলির স্বজনরা জানান, দুই বছর আগে পলির সাথে লিটনের বিয়ে হয়। পলি অন্তঃসত্ত্বা হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও সাবেক ইউপি সদস্য কালীপদ ওঝার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে। প্রসবব্যথা শুরু হলে গত ৩০ জানুয়ারি পলিকে দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পল্লী চিকিৎসক কালীপদ ওঝা বলেন, দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক প্রশান্ত রায়ের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের অনভিজ্ঞ চিকিৎসক আশ্রাফুল আলম ও হাসপাতালের মাঠকর্মী অর্পনা পান্ডে রোগীকে সিজারিয়ান করাতে হবে বলে জানান। পরবর্তীতে সিজারিয়ান অপারেশন না করে স্বাভাবিক প্রসবের কথা জানালে অর্পনা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আমার বাগ্বিতন্ডা হয়।
পল্লী চিকিৎসক কালীপদ ওঝা আরও বলেন, এরপর ৩১ জানুয়ারি পলির সিজারিয়ান অপারেশন করেন গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) বিপুল বিশ্বাস। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বর্তমানে ডেপুটেশনে আগৈলঝাড়া হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন। ওইদিন সন্ধ্যায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল চিকিৎসায় কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েই মারা যায় পলি। সূত্রমতে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়াতে প্রসূতি পলি অধিকারী মৃত্যুর দুই ঘন্টা পর অক্সিজেন লাগিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ ব্যাপারে দুঃস্থ মানবতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সুমন ফকির বলেন, পলির হার্টের সমস্যা ছিলো। অপারেশনের পর হার্টের সমস্যায় সে মারা যায়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ না করে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেনি। আভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।