• মে ৩০, ২০২৩
  • Last Update এপ্রিল ১, ২০২৩ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
  • বাংলাদেশ

বাবুগঞ্জে জাতীয় পার্টির নবযৌবন ফিরিয়েছেন মকিতুর রহমান কিসলু

বাবুগঞ্জে জাতীয় পার্টির নবযৌবন ফিরিয়েছেন মকিতুর রহমান কিসলু

বাবুগঞ্জে জাতীয় পার্টির নবযৌবন ফিরিয়েছেন মকিতুর রহমান কিসলু

✪ আরিফ আহমেদ মুন্না ॥
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে চরম দলীয় কোন্দল, গ্রুপিং আর পাল্টাপাল্টি কমিটিতে জাতীয় পার্টি যখন সাংগঠনিক শক্তি হারিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় অন্তিম নিঃশ্বাস নিচ্ছিল ঠিক তখনই একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে পাল্টে যায় গোটা দৃশ্যপট। জাতীয় পার্টির জন্য ঐতিহাসিক সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার তারিখটা ছিল ২০১৭ সালের ৩০ মে। সময়োপযোগী সেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। তিনি তার দলের মেধাবী ও বিশ্বস্ত এক কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীকে এনে বসালেন বাবুগঞ্জ উপজেলার জাতীয় পার্টির দিকপাল বানিয়ে। প্রায় তিন যুগের পরীক্ষিত সৈনিক মকিতুর রহমান কিসলুকে তিনি জাতীয় পার্টির বাবুগঞ্জ উপজেলা সভাপতি বানালেন। সেইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী মুলাদী উপজেলারও সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনর্গঠন ও সমন্বয় করার দায়িত্ব দিলেন। এরপর আর বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পার্টিকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। উধাও হয়ে গেছে দলের সব কোন্দল এবং গ্রুপিং। নেই পাল্টাপাল্টি কোনো কমিটিও। বরং রয়েছে উপজেলা থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে একক কমিটি। এমন অনন্য নজির অনেক বড় রাজনৈতিক দলেরও নেই। মাত্র একবছর সময়ের মধ্যে সেই অসম্ভবকে যিনি সম্ভব করে দেখিয়েছেন তিনি জাতীয় পার্টির বাবুগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মকিতুর রহমান কিসলু।

সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির অন্যতম সংগঠক তিনি। সংগঠিত জাতীয় পার্টির টিম ওয়ার্কের পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম খালেদ হোসেন স্বপনের অসামান্য কারিশমা এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মৃধা আকতারুজ্জামান মিলন ও শাহরিয়ার আহমেদ শিল্পীর অবদানে দ্বিতীয়বারের মতো এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। ব্যক্তি গোলাম কিবরিয়া টিপু সাধারণ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হলেও এ আসনে নৌকা এবং ধানের শীষের শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া জাতীয় পার্টির জন্য সহজলভ্য ছিল না। আওয়ামী লীগের সহযোগিতা ছাড়াও এজন্য জাতীয় পার্টির যে সাংগঠনিক শক্তি ও দক্ষতার প্রয়োজন ছিল তা অর্জিত হয়েছে গত একবছরেই এবং সেটা মকিতুর রহমান কিসলুর নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে পাঁচবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য আছর উদ্দিন মেম্বারের মেধাবী পুত্র মকিতুর রহমান কিসলু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে তার নেতা গোলাম কিবরিয়া টিপুর হাত ধরেই পদার্পণ ঘটে রাজনীতিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে জাতীয় পার্টিতে অভিষেকের কিছুদিনের মধ্যেই নিজের মেধা ও দক্ষতায় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীর দায়িত্ব লাভ করেন। এরপরে নিজের সাংগঠনিক দক্ষতায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য পদও লাভ করেন। কেন্দ্রীয় রাজনীতি করলেও এলাকার মানুষের সাথে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন তিনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুকে বরিশাল-৩ আসনে বিজয়ী করতে যারা অনন্য অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় যুব সংহতির নেতা ফায়জুল হক সুমন এবং তিনি ছিলেন অন্যতম।

২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সহায়তায় কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেন। ফলে ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান নির্বাচিত হওয়ার পরে বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পার্টির ভিত অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। এদিকে দীর্ঘদিন বাবুগঞ্জ উপজেলার সফল সভাপতি হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদা ওহাব আওয়ামী লীগে যোগদান করলে উপজেলায় অনেকটা নেতৃত্বশূণ্য হয়ে পড়ে জাতীয় পার্টি। উপজেলায় যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দলে শুরু হয় চরম কোন্দল আর গ্রুপিং। পার্টির চেইন অফ কমান্ড ভেঙ্গে গিয়ে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়েও সেই গ্রুপিং ছড়িয়ে পড়ে। প্রাক্তন সেনাসদস্য জয়নাল সিকদার দীর্ঘদিন উপজেলা কমিটির সভাপতি থাকলেও পার্টির আরেক প্রবীন নেতা আওলাদ হোসেনকে সভাপতি করে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। চরম অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে।

বাবুগঞ্জে জাতীয় পার্টির এমন লেজেগোবরে অবস্থায় ২০১৭ সালের ৩০ মে উপজেলা সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন মেধাবী কেন্দ্রীয় নেতা মকিতুর রহমান কিসলু। সভাপতি-সম্পাদকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া সবাইকে পাশ কাটিয়ে তাকে সভাপতি ঘোষণা করেন প্রথম চমক দেখান জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা ও অভিজ্ঞ প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্তটি জাতীয় পার্টির জন্য বাবুগঞ্জ-মুলাদীতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। সর্বদা হাস্যোজ্জল মুখের বিনয়ী ব্যবহারের সাথে নিজের শিক্ষা, মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অল্পদিনের মধ্যেই জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ সকল কোন্দল ও গ্রুপিং দূর করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে আরেক চমক দেখান মকিতুর রহমান কিসলু। পাশাপাশি উপজেলা থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে শক্তিশালী নতুন একক কমিটি উপহার দিয়ে বাবুগঞ্জে জাতীয় পার্টির নবযৌবন ফিরিয়ে আনেন তিনি। #

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *