আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (রহ.) তাফসীরে কবীরে উল্লেখ করেছেন, হাশরের মাঠে এমন একশ্রেণির লোক উপস্থিত হবে, যাদের কোনো বিচার করা হবে না। বিনাবিচারে তারা জান্নাতে চলে যাবে। আল্লাহপাক আমাদের সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করুন! (আমিন)! আল্লামা রাযী (রহ.) লিখেছেন, তাদের পাঁচটি আলামত থাকবে- ১. তাদের সামনে নূর থাকবে, ২. ডানে নূর থাকবে, ৩. বামে নূর থাকবে, ৪. পিছনে নূর থাকবে এবং ৫. মাথার উপর নূর থাকবে। তাদের এ নূরগুলো হবে তাদের আমলের কারণে। সামনে যে নূরটি থাকবে, তা কালিমা তাইয়্যেবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহের নূর। কালিমা তাইয়্যেবা যেহেতু মূল ইমান, তাই এটা নূর হয়ে সামনে থাকবে। আর আল্লাহু আকবার নূরের আকৃতি হয়ে ডান পাশে থাকবে এবং সুবহানাল্লাহ নূরের আকৃতি ধারণ করে বাম পাশে থাকবে। জিকিরের এ ফজিলত তখন পাওয়া যাবে, যখন সহিহ-শুদ্ধভাবে জিকির আদায় করা হবে। একদিন জনৈক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হুজুর আপনার ওয়াজ শুনে ইবাদত শুরু করলাম; এমনকি দীর্ঘদিন যাবৎ আমার তাহাজ্জুদ মিস নেই, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমল শুরু করার পর থেকে আমার ব্যবসায় অবনতি শুরু হয়েছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, এ তো দেখি ব্যবসার উন্নতির জন্য ইবাদত করে। কিন্তু তাকে বুঝাব কী করে? ঘটনাক্রমে তিনি একদিন আমার সঙ্গে এশার নামাজ জামাতে আদায় করলেন। ফরজ আদায়ের পর আমি দুই রাকাত সুন্নত পড়তে না পড়তেই তিনি দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত নফল এবং তিন রাকাত বেতের পড়ে আমার কক্ষে গিয়ে বসে রইলেন। আমি নামাজ শেষে কক্ষে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ফরজ আদায়ের পর কয় রাকাত নামাজ পড়েছেন? তিনি উত্তরে বললেন, কেন? আমি তো দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত নফল এবং তিন রাকাত বেতের মোট সাত রাকাত নামাজ পড়েছি। এরপর আমি তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা বলুন তো আপনি কোন কোন সূরা দিয়ে এ সাত রাকাত নামাজ পড়েছেন? আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি অনতিবিলম্বে বলে ফেললেন, হুজুর! আমি তো সূরা মুখস্থ জানি না, তাই সূরার পরিবর্তে শুধু ‘ইয়া রাব্বী! ইয়া রাব্বী! আল্লাহু আকবার!’ বলে নামাজ পড়েছি। কেরাত, রুকু ও সেজদা সর্বস্থানেই আমি এই তাসবিহ পড়েছি। তার কথা শুনে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার শুধু ব্যবসা নষ্ট হয়েছে, অন্য কোনো কিছু নষ্ট হয়নি তো? তিনি বললেন, জি না। বাকি সবই ঠিকঠাক আছে। আমি বললাম, আল্লাহপাক আপনার ওপর বড় দয়া করেছেন। আপনি যে নামাজ পড়েছেন এতে আল্লাহপাকের সঙ্গে ঠাট্টা বৈ আর কিছু হয়নি। সে জন্য শুধু আপনার ব্যবসায় অবনতি নয়; বরং আপনার ওপর গজব আসার কথা। কিন্তু আল্লাহপাক রহম করেছেন। আপনি নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কিছুর হিসাব রাখতে পারেন; কিন্তু সূরা ফাতেহা ও অন্য দুটি সূরা মুখস্থ করতে পারেন না। আল্লাহর হুকুম পালনে এত অবহেলা করার পরও আপনার ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে গজব আসেনি, সেজন্য আল্লাহপাকের শোকর আদায় করুন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা শূরায় ইরশাদ করেছেন- তোমাদের ওপর যে বিপদাপদ আসে, তা তোমাদেরই কর্মের সামান্য ফল। অধিকাংশ অপরাধই আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেন।
